মিনহাজউদ্দিন মন্ডল, গবেষক ও ইসলামিক সংস্কৃতি বিশ্লেষক (শিক্ষা: এম. এ (ইংরেজি সাহিত্য, কোলকাতা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়)
দ্বীনি শিক্ষা: তানজিমুল মাকাতিব ইমামিয়া মক্তব এবং আল হুজ্জাত মাদ্রাসা
যুগ্ম সম্পাদক: আঞ্জুমান নাসেরানে মাহদী (আ.)
সদস্য: আল হুজ্জাত একাডেমী
ভালো লাগা: দ্বীনি চর্চা এবং কবিতা লেখা)
বিশেষ সাক্ষাত্কার:
প্রশ্ন: সালামুন আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মিনহাজ ভাই, আমাদের জন্য সময় বের করে দেওয়ার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আজকের আলাপন ঘুরে ফিরে থাকবে “আরবাঈন ও সোশ্যাল মিডিয়া”কে কেন্দ্র করে — সাংস্কৃতিক সংহতি ও বৈশ্বিক সংলাপের প্রেক্ষাপটে। প্রথমেই জানতে চাই, আপনার দৃষ্টিতে আরবাঈনের বৈশ্বিক তাৎপর্য কতটা গভীর?
মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: ধন্যবাদ, হাসান ভাই। আরবাঈন কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি এক অনন্ত নৈতিক প্রতিজ্ঞা, এক অবিনশ্বর প্রতিবাদ—অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানবতার অবিচল উচ্চারণ। প্রতিবছর কোটি প্রাণের পদধ্বনি মিলেমিশে যে একতার মহাসুর তোলে, তা আজ সীমান্ত ভেঙে বিশ্বমানবতার এক আধ্যাত্মিক মিছিলের রূপ নিয়েছে।
প্রশ্ন: এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা আপনি কেমনভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: সোশ্যাল মিডিয়া এখন এক অনন্ত বিশ্বমঞ্চ। এটি শুধু সংবাদ নয়, অনুভূতি ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন। আরবাঈনের বার্তা এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মহাদেশ পেরিয়ে, ভাষার সীমানা ভেঙে, এক অদৃশ্য মহাশ্রোতের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা, ছবি, অনুভূতি ভাগাভাগি করে এক বৈশ্বিক সংলাপ সৃষ্টি করছে।
প্রশ্ন: এই অনলাইন সংযোগ কি সত্যিই সাংস্কৃতিক সংহতির পথ খুলে দেয়?
মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: অবশ্যই। আরবাঈনের চেতনা এমন এক নৈতিক ভাষা, যা প্রতিটি সংস্কৃতির কাছে বোধগম্য। যখন জাপানের কেউ কারবালার আত্মত্যাগকে নিজের মাটির ভাষায় ব্যাখ্যা করে, তখন জন্ম নেয় এক সেতুবন্ধন, যা সংস্কৃতির বিনিময় ও সংহতির সেরা উদাহরণ।
প্রশ্ন: তবে কি আপনি মনে করেন সোশ্যাল মিডিয়া এই বার্তাকে কখনো বিকৃত করতে পারে?
মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: সোশ্যাল মিডিয়া দ্বি-মুখী তরবারি। সঠিক প্রজ্ঞা ও দায়িত্ববোধ ছাড়া এটির ব্যবহারে ভুল ব্যাখ্যা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপপ্রচার হতে পারে। তাই দরকার জ্ঞানের আলোতে পরিচালিত, হিকমতপূর্ণ প্রচার কৌশল।
প্রশ্ন: আমরা কীভাবে আরও কার্যকরভাবে আরবাঈনের বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরতে পারি?
মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: প্রথমত, বহুভাষিক কনটেন্ট তৈরি করতে হবে, যেন প্রতিটি সংস্কৃতির মানুষ সহজে গ্রহণ করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক, শর্টস—এ ধরনের আধুনিক মাধ্যম ব্যবহার করে সরল অথচ গভীর বার্তা উপস্থাপন করতে হবে।
তৃতীয়ত, কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ নয়, মানবিকতা, ন্যায়বোধ ও ত্যাগের সার্বজনীন বার্তা তুলে ধরতে হবে, যাতে এর প্রভাব ধর্মীয় সীমানা ছাড়িয়ে মানবতার কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন: আপনার অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ কথার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আশা করি পাঠকরা এই আলোচনায় নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে পাবেন।
মিনহাজউদ্দিন মন্ডল: আপনাকেও ধন্যবাদ। প্রার্থনা করি, আমরা সকলে মিলে মানবতা, ঐক্য ও ত্যাগের এ আলোকে আরও বিস্তৃত দিগন্তে পৌঁছে দিতে পারি।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মজিদুল ইসলাম শাহ
আপনার কমেন্ট